এক বনে নানা রকম জীব-জন্তু বাস করত। একদিন এক গাধা ও শিয়াল বনের রাজা সিংহের সঙ্গে একটি চুক্তি করল। চুক্তিতে বলা হল, এখন থেকে তিন পশু একসঙ্গে শিকার করবে। শিকার যা পাওয়া যাবে তারা তা সমান ভাবে ভাগ করে নেবে। তিনজন একসঙ্গে শিকার করলে কাউকে না খেয়ে থাকতে হবে না।
সিদ্ধান্ত হল- গাধা শিকারযোগ্য প্রাণির ওপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখবে। কাউকে দেখতে পেলে সে তার দিকে এগিয়ে যাবে এবং নিজের পরিচয় দেবে। অন্য দু’জন আড়াল থেকে গাধার দিকে নজর রাখবে। গাধা পরিচয়পর্ব শেষ করার পর শিয়াল আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে গর্জন করে উঠবে। প্রাণিটি স্বাভাবিকভাবেই তখন ভয় পেয়ে যাবে। দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করবে সে। তখন শিয়াল তাকে ধাওয়া করবে। প্রাণিটি তখন শিয়ালকে এড়াতে সোজা দৌড় দেবে, আর গিয়ে পড়বে সিংহের কবলে। সিংহ তখন এক আঘাতে তার দফারফা করবে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী সারাদিন ধরে শিকারের পর সন্ধ্যাবেলায় গাধা, শিয়াল, সিংহ সব শিকাল ভাগবাটোয়ারা করতে বসল। সিংহ গাধাকে বলল তার অংশ ভাগ করে দিতে। বনের রাজা সিংহের এ প্রস্তাব শুনে গাধা খুব খুশি হল। মনে মনে ভাবল- শিকার ভাগ করার দায়িত্ব দিয়ে সিংহ তাকে বিরাট সম্মান দেখিয়েছে। যাইহোক, গাধা খুব সাবধানতার সাথে সমস্ত শিকারকে সমান তিন ভাগে ভাগ করে। এরপর শিয়াল ও সিংহের উদ্দেশে বলল: ভাগের কাজ শেষ। এখন আপনারা দু’জন দয়া করে নিজেদের ভাগ গ্রহণ করুন।
গাধার কথা শুনে সিংহ ভাগগুলোর দিতে তাকিয়ে দেখল। তারপর বলল: তাহলে তোর মতে আমাদের তিনজনের ভাগই সমান হওয়া উচিত, তাই না? তুই কি মনে করিস যে, শিকারের সাথে তোর ইনিয়ে বিনিয়ে গল্প করা আর তাকে আমার হত্যার কাজটা একই সমান?
এ কথা বলেই সিংহ গাধার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং তাকে হত্যা করল। তারপর শিয়ালকে শিকার ভাগ করতে বলে। গাধার পরিণতি দেখে শিয়াল ভয়ে থরথর করে কাঁপছিল। অনেক কষ্টে সে নিজেকে সামলে নিয়ে ভাগ করতে বসল। যা কিছু তারা একসাথে শিকার করেছিল তার প্রায় সবই একভাগে রাখল। আরেক ভাগে রাখল সামান্য একটু অংশ। বড় ভাগটা নেয়ার জন্য সিংহকে অনুরোধ করল। শিয়ালের ভাগ করা দেখে সিংহ বেজায় খুশি হয়ে বলল: আচ্ছা, এত চমৎকার আর ন্যায্য ভাগের কৌশল তোকে কে শিখিয়েছে?
শিয়াল বিনয়ের সাথে বলল: একটু আগে গাধার পরিণতি দেখেই এভাবে ভাগ করা শিখেছি, জনাব।
একথা বলে শিয়াল সিংহের সামনে থেকে চলে গেল। আর মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল যে, ভবিষ্যতে আর কোনো কাজে সে কখনোই সিংহকে সাথে নেবে না।
নীতিশিক্ষাঃ অন্যদের দুর্ভাগ্য থেকে শিখুন
একদিন, মাঠের ধারে দিঘীর জলে নিজের ছায়ায় বাহারী শিং-এর রূপ দেখে দেখে এক শিঙেল হরিণ একেবারে মুগ্ধ। কিন্তু মেজাজ খিচড়ে দিল তার কুচ্ছিৎ দেখতে কাঠি কাঠি পা-গুলো। এমন সময় এক সিংহ এসে হাজির সেই জলের ধারে।
হরিণ তখন একটু আগে দুচ্ছাই করা ঐ পাগুলোরই ভরসায় দে দৌড়, দে দৌড়! বেঁচেও গিয়েছিল প্রায়! কিন্তু মারা পড়ল জঙ্গলে ঢুকে গাছপালায় শিং জড়িয়ে গিয়ে। সিংহের হাতে মরতে মরতে হরিণ আফসোস করল - "কী হতভাগা আমি! বুদ্ধুর বুদ্ধু! যে পাগুলো আমায় বাঁচাতে পারত সেগুলোকেই গাল দিচ্ছিলাম, আর যে শিংগুলো নিয়ে এত গর্ব করছিলাম সেগুলোর জন্যই শেষে মারা পড়লাম।
নীতিশিক্ষাঃ আসলেই যা দামী, অধিকাংশ সময়েই তার ঠিকমত কদর হয় না ।
মানুষ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে যতই আধুনিক হোক না কেন, সুন্দর সমাজ গঠনের জন্য মনুষ্যত্ব, নৈতিকতা এর মতো মৌলিক বিষয় এর শিক্ষা চির অপরিবর্তনীয় এবং অপরিহার্য। শিশুদের মনে প্রকৃত শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য শিক্ষামূলক গল্পের কোন বিকল্প নেই৷ কাউকে কিছু উপদেশ দেয়ার চেয়ে কোন উদাহরণ দিয়ে শিখানো অনেক সহজ। অভিভাবক তাদের সন্তানদের প্রতিদিন “মাই স্কুল” থেকে “ঈশপের গল্প” পড়ে শোনাতে পারেন। অনলাইন জগতে নিরাপদ ভ্রমনের নিশ্চয়তার জন্য “মাই স্কুল” বদ্ধ পরিকর। প্রকৃত মানুষ হিসাবে গড়ে উঠার জন্য “মাই স্কুল” প্রয়োজনীয় উপকরণ নিয়ে সবার পাশে সবসময়। সর্বদাই আমাদের পাশে থাকার মাধ্যমে আপনাদের সাহায্য এবং সহযোগিতা আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস।
  10 May, 2018       1068   views